পেকুয়া (কক্সবাজার), নিজস্ব প্রতিনিধি:
কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, আর্থিক অনিয়ম এবং হুমকি প্রদানের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জনগণের একাধিক অভিযোগ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার ইউপি সদস্যের পদকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করে আসছেন।
অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ:
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মনোয়ারা বেগম দীর্ঘদিন যাবত সরকারি বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যেমন—
- মাতৃত্বকালীন ভাতা
- ভিজিডি (VGD) ও ভিজিএফ (VGF)
- বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা
এগুলোর নামে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে আসছেন। এসব সুবিধা পেতে হলে তাকে “টাকা দিলেই পাওয়া যায়” — এমন একটি অঘোষিত নিয়ম প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কে গরিব আর কে ধনী, সেটা বিবেচনায় না এনে শুধু যারা টাকা দিতে পারে, তাদেরই ভাতা বরাদ্দ দেন বলে জানা যায়।
মোবাইল সিম কার্ড ও টাকা আত্মসাৎ:
সরকারি ভাতার টাকা মোবাইলে আসার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজেই পূর্বে থেকে বাজার থেকে সিম কার্ড কিনে নাম রেজিস্ট্রেশন করে তা সুবিধাভোগীদের নাম দিয়ে দিতেন। বর্তমানে আরও ‘চতুর’ হয়ে প্রতি ওয়ার্ডের জন্য গোপনে তিনটি করে সিমকার্ড রাখেন এবং ভাতার টাকা ঐ সিমে এলে নিজেই টাকা তুলে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার সিম নম্বর খতিয়ে দেখলে বিষয়টির সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে দাবী স্থানীয়দের।
রাস্তার অর্থ আত্মসাৎ:
তার তত্বাবধানে থাকা তিনটি ওয়ার্ডের রাস্তার প্রকল্প থেকে তিনি প্রতি প্রকল্পে গড়ে ৬০ হাজার টাকা করে আত্মসাৎ করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি তার নিজ বাড়ির সামনের রাস্তাও বাজেটের অর্থ থেকে মুক্ত ছিল না।
হুমকি ও ভয়ভীতি:
১নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ নুরুল ইসলাম এই দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে তাকে প্রকাশ্যে মারধর করা হয় এবং চুপ থাকতে হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, কোনো নারী বা পুরুষ যদি তার বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে তিনি মামলা, পুলিশ ও প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে চাপ প্রয়োগ করেন।
পারিবারিক প্রেক্ষাপট ও লাঠিয়াল বাহিনী:
স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, মনোয়ারা বেগম তার মেয়ের জামাই রিফাতকে চাঁদাবাজি ও হুমকির কাজে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রিফাত অশিক্ষিত ও বেকার হওয়ায় এই ধরণের অপকর্মে লিপ্ত। বিভিন্ন সময়ে মনোয়ারা বেগম তাকে সামনে রেখে মানুষের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন।
রমজানের ইফতার সামগ্রী ও কম্বল বিতরণে অনিয়ম:
অভিযোগ রয়েছে, রমজান মাসে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক গরিবদের জন্য প্রেরিত ইফতার সামগ্রী যেমন তেল, চাউল, ছোলা ইত্যাদি তিনি অল্প অল্প দিয়ে বিতরণ করেন এবং বাকি মাল বিক্রি করে দেন। তদ্রূপ, শীতকালে প্রাপ্ত কম্বলও বিতরণ না করে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জনমত ও আহ্বান:
এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করেন, মনোয়ারা বেগমের কারণে প্রকৃত অসহায় ও গরিব মানুষ তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা মনে করেন, “তিনি ভোট না পেলেও মেম্বার থাকবেন”— এমন মনোভাব নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
চেয়ারম্যানের প্রতি আহ্বান:
এলাকাবাসীর পক্ষে প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব হাজী বদিউল আলম এর প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে—
এই সকল অভিযোগ বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। চেয়ারম্যান মহোদয় ন্যায়বিচারপ্রিয়, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং জনগণের আস্থাভাজন ব্যক্তি হওয়ায় তার পক্ষ থেকেই এই অপকর্মের লাগাম টানা সম্ভব বলে এলাকাবাসীর বিশ্বাস।
প্রতিবেদন প্রেরণ:
এই প্রতিবেদনটি কপি আকারে পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
লেখক পরিচিতি:
এই প্রতিবেদন জনস্বার্থে একজন সংবাদ অনুসন্ধানকারীর পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হলো। বিষয়টির যথাযথ তদন্ত হলে আরো বিস্তারিত ভিডিও ডকুমেন্টারি ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হবে।