Home কক্সবাজার চকরিয়া জামাইয়ের নির্যাতনে অতিষ্ঠ রেনু আরা বেগম: ১৫ বছরের সংসারজীবনে শুধু কষ্ট আর...

জামাইয়ের নির্যাতনে অতিষ্ঠ রেনু আরা বেগম: ১৫ বছরের সংসারজীবনে শুধু কষ্ট আর রক্ত

বদরখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে ঘটে গেলো এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। যৌতুকলোভী এক জামাইয়ের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রেনু আরা বেগম (৩৮), যার স্বামী আবু তৈয়ব (৪০) প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে নানা অজুহাতে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন।

সূত্র জানায়, ০৪ জুন ২০২৫ তারিখে মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু তৈয়ব তার শাশুড়ি বাড়িতে এসে আবারও যৌতুকের দাবি তোলেন। অথচ রেনু আরার শাশুড়ি প্রায় ৮ বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন। বর্তমানে সেই বাড়িতে রয়েছে কেবল রেনুর দুই ভাই, যাদের সংসারও আলাদা।

সেদিন বৃষ্টির মধ্যে আবু তৈয়ব তার স্ত্রীকে মারধর করতে গেলে স্থানীয় জনগণ তাকে আটক করে কয়েকটি থাপ্পড় দেয়। মাটিতে পড়ে গিয়ে তার জামা-কাপড় কাদায় ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। ঘটনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ এক ইতিহাস—যেখানে রেনু আরা বছরের পর বছর ধরে স্বামীর ও তার পরিবারের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন।

এক নজরে ইতিহাসটি ভয়ংকর। ১৫/০৯/২০২৪ তারিখে আবু তৈয়ব, তার ভাই, বোন, বোনের জামাই মিলে সারাদিন ধরে রেনু আরাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় সে বদরখালী তার বাবার বাড়িতে পালিয়ে আসে। পরিবারের সদস্যরা তাকে ওই অবস্থায় দেখে হতবাক হয়ে পড়েন।

তৎক্ষণাৎ রেনু আরা চাকরিয়া সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে পরবর্তীতে ২০/০৯/২০২৪ তারিখ কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলা নং: ADR – 516/24 | CP – 136/24 | তারিখ: ২২/০৯/২০২৪
বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

সংসার টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম
রেনু আরা বেগম বিগত ১৫ বছর ধরে স্বামীর কোনো আয়ের সহযোগিতা ছাড়াই হস্তশিল্প ও কারু কাজ করে চার সন্তানের ভরণ-পোষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সন্তানদের মধ্যে তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সবচেয়ে ছোট মেয়েটির বয়স মাত্র ৫ বছর। বড় ছেলে ১৫ বছর বয়সে চট্টগ্রামে পড়াশোনা করছে মাদ্রাসায়, যার খরচও মা-ই চালাচ্ছেন।

অভাবের কারণে বহু ঈদ গেছে যেখানে রেনু আরা নিজের জন্য একটি নতুন জামা পর্যন্ত কিনতে পারেননি। একবেলা ভালো খাবার নয়, অনেক সময় শুধু ডাল দিয়েই সন্তানদের খাওয়াতে হয়েছে তাকে।

রেনু আরার বাবার জীবিত থাকাকালে আবু তৈয়বকে সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য অর্থসাহায্য করা হয়। কিন্তু ৪-৫ বছর বিদেশে থেকে সে এক টাকাও না এনে খালি হাতে দেশে ফিরে আসে। এরপর থেকে সে নিজেকে ‘পাগল’ সাজিয়ে লোকজনের কাছ থেকে দায় এড়াতে থাকে। এমনকি বিদেশ যাওয়ার সময় তার স্ত্রী রেনুর বোনের স্বামীর কাছ থেকেও ১ ভরি স্বর্ণ ধার নেয়, যা সে বিক্রি করে টিকিট করে বিদেশে যায়।

এলাকার সামাজিক চিত্র ও আইনের প্রতি অসচেতনতা
মহেশখালীর কিছু এলাকায় এখনো বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নেই—সেখানে নারী নির্যাতনের ঘটনা একপ্রকার স্বাভাবিক বিষয় বলেই গণ্য হয়। সেসব এলাকায় রেনুর মতো অসহায় নারীরা বিচার চেয়ে বরং উল্টো হেনস্তার শিকার হন।

এলাকাবাসীর আশঙ্কা, আবু তৈয়ব এবার থানায় উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করতে পারে। তবে রেনু আরা বেগমের প্রতি স্থানীয়দের সহানুভূতি ও সহায়তা রয়েছে বলেই এখনো সে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।

শেষ কথা
রেনু আরা বেগম একজন সংগ্রামী নারী। তিনি একা হাতে সন্তানদের বড় করছেন, শিক্ষিত করে গড়ে তুলছেন, অথচ তার স্বামী হয়ে তাকে শুধু কষ্ট আর রক্ত ছাড়া কিছুই দেয়নি। তার মামলার সুষ্ঠু বিচারই এখন একমাত্র আশার আলো।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here